মিনি কক্সবাজার পারকি সমুদ্র সৈকত চট্টগ্রাম

মিনি কক্সবাজার পারকি সৈকত ও লুসাই পার্ক।

মিনি কক্সবাজারে হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে চট্টগ্রামের অন্যতম সমুদ্র সৈকত আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকত।

অপরুপ সৌন্দর্যের এই সৈকতে একপাশে সুদীর্ঘ ঝাউয়ের সারি, সৈকতে একের পর এক আঁচড়ে পড়া ঢেউ, পর্যটকদের আনাগোণায় অপূর্ব সৌন্দর্য্যের পর্যটক স্পট, সাগরের কোল ঘেঁষেই সৈকত ঘিরে সবুজ শ্যামল লুসাই পার্ক, লুসাই পার্ক সংলগ্ন পিকনিক স্পট, সুবিশাল পার্কিং, সৈকতে ঘোড়ায় চড়া, হরেক রকমের রাইড, স্পিড বোট রাইড সবমিলিয়ে অনিন্দ্য সুন্দর এই সৈকতটি দেশ বিদেশী পর্যটকদের কাছে যেন কক্সবাজার। সেই ছোঁয়ায় পর্যটকরা এই সৈকতের নাম দিয়েছে মিনি কক্সবাজার।

চট্টগ্রাম শহর থেকে নয় কাছে নয় দূরে মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টার পথ দূরত্বে অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকত। একদিকে ঝাউবনের সবুজের সমারোহ, আরেকদিকে নীলাভ সমুদ্রের বিস্তৃত জলরাশি আপনাকে স্বাগত জানাবে । আর সমুদ্র তীরের মৃদুমন্দ বাতাস আপনার মনকে আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেবে নিমেষেই।

এখানে রয়েছে লাল কাঁকড়া, হরেক রকম জলজ কীট, ঝাউবনে হরেক রকম পাখি, লুসাই পার্ক সহ অসংখ্য প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য।

ঝাউবন ঘেঁষে উত্তর দিক বরাবর হেঁটে গেলে দেখতে পাবেন বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলি নদীর মোহনা।

ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত থাকায় প্রতিদিন সৈকতে ঢল নামে হাজারো পর্যটকের। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ট্রাভেল গ্রুপ হতে শুরু করে সর্বস্থরের জন্য সম্পূর্ণ প্রকৃতির হাতে গড়া যেন অসাধারণ এক পর্যটক স্পট।

পারকি সৈকত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে নান্দনিক লুসাই পার্ক। দূর দূরান্ত থেকে যারা আসে তারা লুসাইতে অবস্থান নিয়ে সৈকতের আনন্দে মেতে উঠে। লুসাই পার্কের কোল ঘেঁষে সৈকত। পার্ক আর সাগরের কি গভীর মিতালী তা লুসাই পার্ক থেকে দেখা সম্ভব।

লুসাই পার্কে আছে পদ্মফুল বেষ্টিত একটি ছোট্ট লেক, লেকে ঘুরার জন্য আছে প্যাডেল বোট, ছায়াঘেরা বাদাম গাছের ছাউনি। আছে সর্পিল সাজে একটি ওয়াচ টাওয়ার। এখানে বসে দেখা যাবে বঙ্গোপসাগরের বিউ।

লুসাইতে পর্যটকদের জন্য রয়েছে সুলভ মূল্যের একটি রেস্টুরেন্ট। পর্যটকদের কাছে দেশ-বিদেশী খাবার সরবরাহে ব্যস্ত সময় পার করে রেস্টুরেন্টটি। লুসাই আছে হরেক আকৃতির রাজহাঁস, আছে টার্কি। চাইলে আপনিও তাদের সাথে খেলায় মেতে উঠতে পারেন।

সৈকতের বাড়তি আকর্ষণ
দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজঃ

পারকি সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে দানবাকার ক্রিস্টাল গোল্ড জাহাজকে ঘিরে আগ্রহের কমতি নেই। সকলেই জাহাজের নিচে গিয়ে হরেক রকম সেলফিতে ব্যস্ত থাকে সারাক্ষণ।

২০১৭ সালের ৩০ মে দুপুরে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে এমভি ক্রিস্টাল গোল্ড নামের জাহাজটি আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকতে গিয়ে আটকা পড়ে। এর আগে বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে জাহাজটি জব্দ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে বহির্নোঙরে ছিল। পরিবেশবান্ধব না হলেও সকলেই ভীড় জমাচ্ছেন এই জাহাজের সামনে গিয়ে কিছু সময় কাটাতে।

বারবিকিউ, ফায়ারক্যাম্প ও তাঁবুবাসঃ

বারবিকিউ, ফায়ারক্যাম্প ও তাঁবুবাসের জন্য পারকি সৈকতের মতো নিরিবিলি ও মুগ্ধতা অন্য কোন সৈকতে পাওয়া যায় না। ক্যাম্প করার জন্য আপনাকে অবশ্যই অনুমতি নিতে হবে। সেক্ষেত্রে লুসাই পার্ক সংলগ্ন এলাকায় করলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।

লুসাই কর্তৃপক্ষ আপনাকে অনুমতি ও যাবতীয় কাজে সহায়তা দিবে।

সৈকতের প্রবেশমুখঃ

পারকি সৈকতে পৌঁছে দুই দিক থেকে সৈকতে প্রবেশ করা যায়।

প্রথমটি সৈকতের রোড। দ্বিতীয়টি লুসাই পার্ক। প্রথমটি সৈকতের রোড হলেও এই রোডে খুবই ভীড় থাকে ও অনেকটা গিঞ্জি এলাকা। সবসময় লোকে লোকারণ্য।
এই রোড দিয়ে পর্যটকবাহী গাড়িগুলো খুবই বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াই।

একটু নিরিবিলিতে সৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে প্রবেশ করুন লুসাই পার্ক দিয়ে৷ এই পার্কে কোন প্রবেশ ফি নেয়া হয়না। রয়েছে গাড়ি পার্কিং এর সুবিধা। প্রকৃতির সবুজ শ্যামল রুপ যেন লুসাই পার্ক। পর্যটকদের সব ধরণের সুবিধা আপনি এখানে পেতে পারেন। রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা।

শৌচাগার হতে শুরু করে সব কিছুর ভাল ব্যবস্থা লুসাই পার্কে দৃশ্যমান।

পারকি যাওয়ার উপায় ও খরচাপাতিঃ

★প্রথম উপায়ঃ (কর্ণফুলী সেতু হয়ে)

চট্টগ্রাম শহরের যেকোন স্থান থেকেই বাস অথবা টেম্পুতে করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত সেতু বা তৃতীয় কর্ণফুলি সেতু ৩০ টাকা (সম্ভাব্য) । সেখান হতে আনোয়ারার বটতলী মোহছেন আউলিয়ার মাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠবেন, ৩০ টাকা। (এখানে বৈলতলী ও বটতলীর দুই রকম বাস ছাড়ে। আপনি অবশ্যই বটতলীর বাসে উঠবেন)

বটতলীর মোহছেন আউলিয়া মাজারগামী বাসে উঠে কন্ডাকটরকে বলতে হবে ‘সেন্টার’ নামক জায়গায় যাতে নামিয়ে দেই। সেন্টারে নেমে সিএনজি বা রিকশা যোগে যেতে পারেন পারকি সৈকত। ভাড়া ৩০ টাকা।

চট্টগ্রাম শহর হতে যাওয়ার খরচ লোকাল ৯০ টাকা।

এক্ষেত্রে,
ঢাকা থেকে পৌঁছানোর খরচ ৪০০-৫৮০ টাকা
চট্টগ্রাম থেকে পৌঁছানোর খরচ ৯০-৫০০ টাকা

আসা যাওয়া ও খাওয়া সহ মোট খরচঃ

ঢাকা থেকে ১০০০-১৫০০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে ২৮০-৪০০ টাকা।

(রিজার্ভ সিএনজিতে আসলে ভাড়া একটু বেশি।
তবে ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে চট্টগ্রামের যে কোন জায়গা হতে রিজার্ভ সিএনজি নিয়ে পারকি সৈকত আসতে পারবেন)

★দ্বিতীয় উপায়ঃ (১৫ নম্বর ঘাট হয়ে)

প্রথমে চট্টগ্রাম শহর হতে পতেঙ্গা ১৫ নং ঘাট। ঘাট হতে বোটে করে কর্ণফুলী নদী পার হয়ে সিএনজি ভাড়া করে পারকি সৈকত।

ক. (রিজার্ভ গাড়িতে যাত্রা করলে)

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ননএসি বাস ৪৮০ টাকা। চট্টগ্রাম শহর থেকে সিএনজি তে করে ১৫ নম্বর ঘাট (নেভাল এর পাশে /এয়ারপোর্ট গেটের একটু সামনে) যেতে হবে। রিজার্ভ ২০০ টাকা। এরপর বোটে করে নদী পার হবেন। ১৫ টাকা। ঘাট চার্জ ২/৩ টাকা। নদী পার হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা বা সিএনজি নিয়ে চলে যান পারকি সৈকত। ভাড়া ১০০ – ১২০ টাকা।

এক্ষেত্রে,
ঢাকা থেকে পৌঁছানোর খরচ ৮২০-৮৫০।
চট্টগ্রাম থেকে খরচ ৩৪০-৪০০ টাকা।

আসা যাওয়া ও খাওয়া সহ মোট খরচঃ

ঢাকা থেকে ১৭০০-১৮০০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে ৮০০-৯০০ টাকা।

খ. (লোকাল গাড়িতে যাত্রা করলে)

ঢাকা থেকে নরমাল ট্রেন বা বাসে ৩০০/ ৪৮০ টাকা।
চট্টগ্রাম শহর (ঢাকা থেকে বাসে এলে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়া নামতে পারেন) থেকে বাসে করে যাবেন ফ্রিপোর্ট, ভাড়া ১০ টাকা। সেখান থেকে ১০ টাকায় লেগুনা বা মাহিন্দ্রাতে করে চলে যান ১৫ নম্বর ঘাট।

এ পথটা খুব সুন্দর। একপাশে নদী-জাহাজ আর অন্যপাশে ইন্ড্রাস্ট্রি, সামরিক এলাকা আর চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট। পথে যমুনা, মেঘনা, মবিল, ওমেরা এসব ইন্ড্রাস্ট্রিও চোখে পড়বে। এসব দেখতে দেখতে চলে আসুন ঘাটে। ৩ টাকা ঘাট ফি দিয়ে ১৫ টাকা খরচে পার হবেন কর্ণফুলী নদী। ভাগ্য ভালো হলে নদী পার হবার সময় বড় জাহাজ আপনার সামনে দিয়ে যেতে দেখবেন।

তারপর ১০/১৫ টাকা দিয়ে চলে যাবেন ‘সেন্টার’ নামক স্থানে। এরপর সেন্টার থেকে ২০ টাকা দিয়ে চলে যাবেন পারকি বিচ। সেন্টার গেলে কিছু রাস্তা আপনার উল্টো যেতে হবে কিন্তু সেখান থেকে কনফার্ম শেয়ার্ড সি এন জি পাবেন। সেন্টারে একটা স্মৃতিসৌধ আছে, চাইলে দেখে আসতে পারেন।

এক্ষেত্রে,
ঢাকা থেকে পৌঁছানোর খরচ (ট্রেন/বাস ৪০০-৫৫০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে পৌঁছানোর খরচ ৬০-৮০ টাকা।

আসা যাওয়া ও খাওয়া সহ মোট খরচঃ

ঢাকা থেকে ৮০০-১৩০০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে ২০০-৩০০ টাকা।

খাবার ব্যবস্থাঃ

পারকি সৈকতে খাবারের জন্য অনেক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় ছোট হোটেল ছাড়া ও আছে জনপ্রিয় কয়েকটি রেস্টুরেন্ট। একটু রিফ্রেশমেন্টের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় লুসাই পার্ক রেস্টুরেন্ট। চাইলে যাওয়ার আগেই টিমে বা ফ্যামিলির জন্য এই রেস্টুরেন্ট অগ্রিম খাবার বুক দিতে পারেন।

থাকার ব্যবস্থাঃ

গত কয়েক বছরে প্রচুর পর্যটকের আগমণের কারণে এখানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে উঠছে মোটেল। পারকি রিসোর্ট যার মধ্যে অন্যতম। পারকিতে রাত কাটাতে চাইলে স্থানীয় রিসোর্টে উঠতে পারেন।

One Response

  1. Moin Uddin Torid