‘হাউ ডেয়ার ইউ’ দুনিয়ার নেতাদের একহাত নিয়েছে গ্রেটা থানবার্গ
_ নীল জামশেদ
১৬ বছরের গ্রেটা থানবার্গ মাত্র এক বছর আগেও স্টকহোমের ক্লাস নাইনের ছাত্রী ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে যে অ্যাক্টিভিজম তৈরি হয়েছে, এখন সে তার সবচেয়ে পরিচিত মুখ। রাষ্ট্রসংঘের শীর্ষবৈঠকে দুনিয়ার নেতাদের একহাত নিয়েছে গ্রেটা থানবার্গ।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে বিশ্ব নেতাদের ধুয়ে দিলেন কিশোরী গ্রিটা থানবার্গ। সোমবার( ২৩ সেপ্টেম্বর) জলবায়ু সম্মেলনে গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন রোধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘হাউ ডেয়ার ইউ?’ জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্দোলন করে পরিচিত হয়ে ওঠা সুইডিশ কিশোরী বলেন, ‘আমার এখানে থাকার কথা নয়। সমুদ্রের ওপারে আমার স্কুলে ফেরৎ যাওয়া উচিত’
গ্রিটা থানবার্গ বলেন,
লাল রঙের একটি জামা, জিন্স। হাতে পিংক রঙের একটি কাগজ। এই কাগজটি তিনি ছড়িয়েছেন অনেকদিন। তাতে ছাপানো আছে জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে তার ও সঙ্গীদের দাবিগুলি। মাথার চুল স্কুলছাত্রীদের মতোই বিনুনি বাঁধা। মানুষজন তাকে সাধারণ ভেবেছিলেন। কিন্তু তার বক্তব্যে উঠে এল প্রবল আক্রমণ। বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনায়কদের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন গ্রেটা থুনবার্গ। তিনি প্রত্যেকের ব্যবহারেই যে মর্মাহত এ কথা বলতে কুণ্ঠা করেননি।
গ্রেটার কথায়,
তোমাদের এত দুঃসাহস হয় কি করে? ‘হাউ ডেয়ার ইউ?’
বলে বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্যের অনেকটাই ছিল শান্ত, ধীরস্থির। আবার কখনও উচ্চস্বরে সে কথা বলেছেন। আমেরিকার নিউইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলন শুরু হয়েছে। এই মাসের শুরু থেকেই নিউইয়র্ক- এ উপস্থিত গ্রেটা। গত কুড়ি তারিখ জলবায়ু ধর্মঘট সারাবিশ্বেই প্রভাব ফেলেছে। তারপর জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে তাঁর এই বক্তব্য। গ্রেটা থুনবার্গ বলছেন, ‘সবকিছু ভুল হচ্ছে। আমার এখানে থাকার কথা নয়। নিজের স্কুলে থাকা উচিত।
তিনি আরও জানাচ্ছেন,
ফাঁকা বুলি দিয়ে তোমরা আমার স্বপ্ন কেড়েছো। আমার শৈশবটাই কেড়ে নিয়েছ।
গত একবছর ধরে পৃথিবীর জলবায়ু, আবহাওয়া পরিবর্তনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সে আন্দোলন করে যাচ্ছে। সুইডেনের পার্লামেন্টের সামনে তিনি প্রথম একা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বসতেন। তার ভাবনায় বরাবর উঠে এসেছে পরিবেশ ও জলবায়ুর সুস্থ অবস্থান ফিরিয়ে আনার কথা। গ্রেটা জানিয়েছেন, রাষ্ট্রনায়করা টাকাপয়সা, সুন্দর আর্থিক বৃদ্ধির কথা বলছেন। কিন্তু পরিবেশ জলবায়ুর অবস্থান যে বদল হচ্ছে তার দিকে তাদের কোনও খেয়াল নেই। আগামী প্রজন্ম কিভাবে বাঁচবে, সেদিকে তাদের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই।
তার কন্ঠে কখনও সুর চড়েছে। কখনও তিনি থমকে গিয়েছেন পরিস্থিতির সামনে। এ দিনের বক্তব্যর পর গ্রেটা থুনবার্গ হয়েছেন সকলের চোখের মণি। আগে রাষ্ট্রনায়করা তার সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। তবে প্রত্যেকেই নাকি সৌজন্যে দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা তাদের কথা রাখেননি। সেই কথা রূঢ়ভাবে গ্রেটা বলেছেন এদিন। তাদের মতো আগামী প্রজন্মকে একটি ফাঁকা শৈশব আজকের রাষ্ট্রনায়করা তুলে দিচ্ছেন বারে বারে। এমন কথা উঠে এসেছে এই ১৬ বছরের কিশোরীর মুখে। ওয়াকিবহাল মহল বলছে, গোটা পৃথিবীর সিস্টেম, ক্ষমতাশালী অস্তিত্ব ও পুঁজিবাদী সভ্যতার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন গ্রেটা। সহজ কথা সহজভাবেই তিনি প্রকাশ করেছেন। ভিত নড়িয়ে দেওয়ার মতোই ঘটনা এটি।