কাপ্তাইয়ের পর পারকি সমুদ্র সৈকতে পর্যটক নিঁখোজ | সাঁতার এবং অন্যান্য
১৩ জুন কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে দুজন পর্যটক মৃত্যুর পর আজ পারকি সৈকতে ডুবে একজনের মৃত্যু।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থানার পারকি সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে কাউছার মোহাম্মদ মিনহাজ (১৪) নামে এক পর্যটক নিখোঁজ হয়েছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বন্ধুদের নিয়ে গোসল করতে নেমে ভাটার টানে তলিয়ে যায়।
মিনহাজ ১৬ জন বন্ধুসহ শনিবার সকালে ফটিকছড়ি থেকে পারকি সৈকতে বেড়াতে আসেন। তিনি ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে ও জাহানপুর আমজাদ আলী আবদুল হাদী ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, নিখোঁজ পর্যটককে উদ্ধারে স্থানীয়রা চেষ্টা চলছে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল আনা হয়েছে। তারা উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।
পানিতে কেন ডুবে মারা যায়? বলি নাকি সাঁতার না জানা?
বিস্তারিত পড়ুন। আশা করছি কিছু ভুল ধারণা ভাঙবে এবং কিছু করণীয় জানা যাবে।
আমাদের লোকসমাজে একটি কুপ্রথা বা কুসংস্কার চালু আছে, যেখানে বলা হয় কেউ ডুবে মারা গেলে তাকে বলি নিয়েছে, অর্থাৎ জিন বা কোন আত্মা মেরে ফেলেছে।
এটি শতভাগ ভুল ধারণা।
বাস্তবে বলি বা জিনে মেরে ফেলা এরকম কোন ভিত্তি নেই। কিন্তু জিন জাতির অস্তিত্ব কুরআনে আছে। তবে তারা পানিতে ডুবিয়ে মানুষ মারবে এমন ভিত্তি নেই।
প্রশ্ন ১. তাহলে ডুবে মরা যাওয়ার আসল কারণ কি?
এক্ষেত্রে প্রধান কারণ সাঁতার না জেনে ডুবে মারা যাওয়া।
অনেকেই সাঁতার না জেনে পানিতে নামে। সেক্ষেত্রে তাদের পা যদি মাটি হতে সরে যায় বা জ্যাকেট না থাকে তাহলে তারা ধীরে ধীরে ডুববে, নিঃশ্বাস বন্ধ হবে বা স্রোতে ভেসে যাবে। ২-৫ মিনিটের মধ্যে তাদের উদ্ধার করতে না পারলে তারা নিশ্চিত মারা যাবে। অক্সিজেন ছাড়া পানিতে ৩ মিনিটের অধিক থাকা কারো সম্ভব না।
প্রশ্ন ২. সাঁতার জানলেও কেন সাগরে ডুবে মারা যায়?
উত্তরঃ হুম সাঁতার জানলেও নদী বা সাগরে ডুবে মারা যায়। এর কয়েকটি কারণ হলো সাঁতারে দম ধরে রাখতে না পেরে ডুবে যাওয়া। আমরা প্রায় সকলেই সাঁতার জানি। কিন্তু অনেকের দম (ফুসফুসে বাতাস ও শরীরে এনার্জি ধরে রাখা) রাখতে পারি না। হঠাৎ ঢেউ বা রিপ কারেন্ট (সামুদ্রিক উল্টোস্রোত) আপনাকে তীর থেকে গভীর সাগরের দিকে নিয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে সাঁতারে পারদর্শী না হলে আপনি একসময় লড়াই করতে করতে ডুবে যাবেন। প্র্যাকটিস না থাকলে বেশিক্ষণ দম ধরে রাখতে না পারায় অনেক সাঁতারু ও মৃত্যুবরণ করে।
প্রশ্ন ৩. সাঁতার হালকা জানলে বড় বিপদ থেকে কিভাবে বাঁচবেন?? দেখছেন আপনি তীর হতে দূরে সরে গেছেন। ১০০/২০০/২০০০ ফুট/ ২ কি.মি দূরে তীর। সাঁতার কেটে সামনে যেতে পারছেন না। তখন কি করবেন?
উত্তরঃ তখন কাছে থাকা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য চিৎকার করুন। কিন্তু চিৎকার করে ক্লান্ত হওয়া যাবে না। তখন সাহস রাখুন। জোরসে সাঁতার কাটবেন না। কারন উল্টো স্রোতে যতই সাঁতার কাটবেন ততই আপনার দম ও শক্তি ফুরিয়ে যাবে। তাই নিরবে মন শান্ত করুন। হালকা হাত পা নেড়ে নিজেকে ভাসিয়ে রাখুন। এমন হালকা নাড়বেন যাতে শক্তি অপচয় না হয়। আর তখন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। একসময় আপনার রেসকিউ টিম হাজির হবে।
প্রশ্ন ৪. আপনি ভেসে যাচ্ছেন, কেউ জানতে পারেনি। তখন কি করবেন??
উত্তরঃ তখন কোন ভাবেই ভয় পাওয়া যাবে না। স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে একটি জায়গা টার্গেট করুন যেখানে আপনি উঠতে চান। সেটা হতে পারে উপকূলীয় এলাকা। সবচে কাছের নৌকা বা জাহাজ। ধীরে সাঁতার কাটুন। শক্তি ক্ষয় না হয় মতো। মনে সাহস রাখলে আপনি বাঁচবেন।
মাঝ সাগরে হলে সাঁতারের সময় অবশ্যই দিক টিক করুন সূর্য/চাঁদ বা কাছের পরিচিত কিছু দেখে। অন্যতায় আপনি গভীর সাগরে চলে যাবেন।
প্রশ্ন ৪. বিপদে পড়লে সাঁতারে গায়ের কাপড় কেমন থাকা উচিত?
উত্তরঃ লম্বা প্যান্ট থাকলে প্যান্টের নিচ দিয়ে বাতাস ডুকিয়ে হাঁটু ভেঙ্গে সাঁতার না কেটে ভেসে থাকা যায়। লুঙ্গি দিয়েও প্রচুর বাতাস ডুকিয়ে আপেল আকৃতি করে ভেসে থাকুন।
ওড়না বা শাড়ি দিয়েও একই ভাবে বাতাস ধরে রেখে ভেসে থাকা যায়।
গায়ের অপ্রয়োজনীয় ব্যাগ বা অন্যান্য জিনিস,জুতা এসব ফেলে দিন। ভারী জিনিস আপনাকে ডুবাতে সহায়ক হবে।
প্রশ্ন ৫. পুকুর/নদী/সাগরে কি এমন কিছু আছে যা আপনাকে টেনে ডুকিয়ে ফেলবে?
উত্তরঃ এসব কিছু ভুল ধারণা। কোন দৈব শক্তি আপনাকে পানিতে ডুবাবে না।
কিন্তু কিছু পানির নিচের প্রাণী আছে ভয়ংকর। তাদের থেকে সাবধান থাকা উচিত।
ক. কুমির হতে সাবধান। সুন্দরবনের নদীগুলোতে কুমিরের দেখা মিলে।
খ. স’ফিস, ইলেকট্রিক ইল মাছ, শার্ক, জেলি ফিস কামড় দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব নেই বললেই চলে।
তাই ভয় পাওয়ার ও কারণ নেই।
★বিঃদ্রঃ বিপদে পড়লে কখনো জোরে সাঁতার কাটবেন না। জোরে সাঁতরালে প্র্যাকটিস না থাকলে ১ মিনিটেই আপনার দম ফুরিয়ে যাবে। প্র্যাকটিস থাকলে আপনি ৫-১০ ঘন্টার অধিক সাঁতরাতে পারবেন।
★সাঁতার সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান।
নীল জামশেদ।
সাঁতারু, বাংলা চ্যানেল।